আখাউড়া পল্লী বিদ্যুৎ অফিসে চলছে ঘুষের রমরমা কারবার

বর্তমানে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া পল্লী বিদ্যুৎ অফিসে গ্রাহক হয়রানি দিন দিনে বেড়েই চলেছে।  “অর্থের বিনিময়ে সেবা” এখন ওপেন সিক্রেট। নতুন সংযোগ প্রদান, লাইন মেরামত, মিটার,  ট্রান্সফরমার পরিবর্তন, বিল প্রধানসহ সব ক্ষেত্রেই গ্রাহকদের কাছ থেকে উৎকোচ নেয়া হচ্ছে। ঘুষ ছাড়া কোন কাজই হয়না এই অফিসে। পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের কর্মকর্তা কর্মচারী ও ইলেকট্রিশায়নদের দৌরাত্মে প্রতিদিনই নাজেহাল হচ্ছেন গ্রাহকরা। গতানুগতিক কোন নিয়মে এইখানে কোন সেবাই পাচ্ছে না গ্রাহকরা। এসব বাদ দিয়েও গ্রাহক নিয়মিত বিল পরিশোধ করলে ও বকেয়া বিল পাঠিয়ে টাকা আদায়ের অভিযোগ রয়েছে। কিন্তু এসব অনিয়মের অভিযোগ পল্লী বিদ্যুত অফিসের কর্মকর্তারা অস্বীকার করেছেন।
একটি সূত্র জানায়, আখাউড়া পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির অফিসটিতে কতিপয় দুর্নীতি পরায়ন কর্মকর্তাদের যোগসাজসে গ্রাহক সেবার নামে এখানে দীর্ঘ দিন ধরেই সক্রিয় রয়েছে একটি শক্তিশালি সিন্ডিকেট। কোন গ্রাহক সমস্যায় পড়ে অফিসে আসলে পাঠিয়ে দেওয়া হয় তাদের কাছে। অন্যথায় তাদের সমস্যা সহজে সমাধা হয় না। মাসের পর মাস অপেক্ষা করতে হয় বলে একাধিক ভুক্তভোগী জানায়। একটি সূত্র জানায়, পৌর শহরসহ উপজেলায় পল্লী বিদ্যুৎ জোনাল অফিসের আওতায় প্রায় ২৮ হাজারের বেশি বিদ্যুৎ গ্রাহক রয়েছে। তাছাড়া ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর ও বিজয়নগর উপজেলায় আখাউড়া জোনাল অফিস থেকে বিদ্যুত সরবরাহ হয়ে থাকে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া পল্লী বিদ্যুৎ এই পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির অফিসটিতে বর্তমানে নতুন বিদ্যুৎ সংযোগ নিয়ে চলছে এক তেলেছমতি কারবার। নতুন বিদ্যুতের সংযোগের জন্য আবেদন করার পর থেকে মিটার লাগানো পযর্ন্ত চলে ঘুষ গ্রহনের মহোৎসব। কিছু অসাধু কর্মকর্তা কর্মচারি আর ইলেকট্রিশিয়ানদের পাশাপাশি তাদের অনুগত কিছু দালাল চক্রের হাতে জিম্মি হয়ে পড়েছে এই অফিসটি। তাদের দৌরাত্ম্যে অতিষ্ট হয়ে পড়েছেন সাধারণ গ্রাহকরা। অভিযোগে জানা যায়, নিয়মানুযায়ী একজন গ্রাহক নতুন সংযোগের জন্য ১’শ টাকা দিয়ে আবেদন করতে হয়। এরপর ইন্সপেক্টররা পরিদর্শনের পর বৈধতা যাচাই করে অফিসে রির্পোট প্রদান করে। রিপোর্টে গ্রাহক বিদ্যুৎ পাওয়ার উপযোগী হলে প্রায় সাড়ে ৫’শ টাকা দিয়ে মিটার বোর্ড ও আর্থিং রড নিয়ে বাড়ির ওয়্যারিং করে ইলেকট্রিশিয়ান দ্বারা ওয়্যারিং রির্পোট জমা দেবেন। পরবর্তীতে মিটার সিকিউরিটি আর সদস্য ফিসসহ প্রায় ১ হাজার টাকা পল্লী বিদ্যুৎ অফিসে জমা দিতে হয়। কিন্তু বাস্তব প্রেক্ষাপট একবারেই ভিন্ন। বিদ্যুৎ-এর আবেদনের পর ঘুষ ছাড়া কোন কাজই হয়না এখানে। অনেক ধরনা দিয়ে কোন কাজ যখন হয় না তখন বাধ্য হয়ে ঘুষ লেন দেন করছে গ্রাহকরা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পৌর শহরের শান্তিনগর এলাকার বাসিন্দা জানায়, বাসায় পল্লী বিদ্যুতের সংযোগ দিতে অফিসিয়ালি যাবতীয় কাজ শেষ করে টানা ১ বছর ঘুরে ও মিটারসহ নতুন লাইন পাইনি। কিন্তু মোটা অংকের টাকা দালালদের মাধ্যমে দেওযার পর আমার সমস্যা দ্রুত সমাধান হয়। সড়ক বাজারের ব্যবসায়ী মোঃ আবু ছায়েদ মিয়া বলেন, তার প্রতিমাসে বিদ্যুৎ বিল আসে ৭-৮’শ টাকা। কিন্তু গত মাসে বিল আসে ১৪শ৫০টাকা। তিনি আরো জানায় প্রতিমাসে বিদ্যুৎ বিল নির্ধারিত সময়ে পরিশোধে হয়। সম্প্রতি অফিস থেকে গত তিনটি বিদ্যুৎ বিল বকেয়া পরিশোধ করার জন্য বলা হয়। অফিসে গিয়ে দেখেন লেজারে তার বিল বকেয়া রয়েছে। পরে অফিসে জমাকৃত বিদ্যুৎ বিলের পরিশোধের কাগজপত্র দেখালে অতিরিক্ত টাকা পরিশোধ থেকে রক্ষা পায়। পৌরশহরের শান্তিনগরের মুসলেহউদ্দিন ভূইয়া বলেন, আগে প্রতি মাসে বিল আসত ১২/১৩ শ টাকা। কিন্তু গত কয়েক মাস ধরে ২ হাজার টাকারও উপরে বিল আসছে।  মুল বিলের সঙ্গে ৩শ টাকা অতিরিক্ত যোগ করা হচ্ছে। অফিসে যোগাযোগ করেও এর কোন উত্তর পাওয়া যাচ্ছে না। পৌর শহরের কলেজ পাড়ার মোঃ হেলাল চৌধুরী বলেন, সম্প্রতি আমার ৩টি বিলের সাথে মিটারের বিদ্যুৎ ইউনিটের কোন মিল পাওয়া যাচ্ছে না। মিটারে উঠা মোট বিলের সঙ্গে অতিরিক্ত আরো ১শ ইউনিট সংযোগ করে বিল পাঠানো হচ্ছে। আখাউড়া পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ডিজিএম মোঃ মামুনূর  রশিদ বলেন, কাজ করতে গেলে ছোট খাটো ভূলত্র“টি থাকতে পারে। সঠিক ভাবে সার্বক্ষনিক গ্রাহকদের সেবা দিতে আমাদের চেষ্টার ক্রটি নেই। সাধারণ গ্রাহকরা দালালের মাধ্যমে অতিরিক্ত টাকা দিয়ে কিছু করলে আমাদের কিছু করার থাকে না।

Related Posts

About The Author

Add Comment