বাংলাদেশ গেমসের পর্দা উঠছে আজ

বাংলাদেশ গেমসের পর্দা উঠছে আজManab Jamin স্পোর্টস রিপোর্টার: ১১ বছর এক মাস এক দিন পর আজ পর্দা উঠছে অষ্টম বাংলাদেশ গেমসের। ৯ দিনব্যাপী এবারের গেমসে ৩১টি ডিসিপ্লিনে প্রায় ৮ হাজার ক্রীড়াবিদ ২৩০টি দলের হয়ে ৩৪৬টি সোনার লড়াইয়ে অবতীর্ণ হবেন। বাংলাদেশ অলিম্পিক এসোসিয়েশনের উদ্যোগে আয়োজিত এ প্রতিযোগিতাকে বাংলাদেশের অলিম্পিকও বলা যায়। ১৯৭৮ সালের প্রথম আসরের নাম অলিম্পিক চ্যাম্পিয়নশিপই ছিল। আজ সন্ধ্যা ৭টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে গেমসের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন। গেমসের মশালে আগুন দেয়ার
কাজটি করবেন সাবেক তারকা হকি খেলোয়াড় জুম্মন লুসাই। কুচকাওয়াজে অংশ নেয়া প্রায় ৫ হাজার ক্রীড়াবিদকে শপথ পাঠ করাবেন দেশের বর্তমান দ্রুততম মানব মোহন খান ও মানবী নাজমুন নাহার বিউটি। ২১ কোটি ৭৪ লাখ টাকা বাজেটের বাংলাদেশ গেমসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পেছনেই খরচ প্রায় সাড়ে ১১ কোটি টাকা। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর নবম পদাতিক ডিভিশন ও ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি এশিয়াটিক যৌথভাবে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছেন। বিকাল ৪টা থেকে শুরু জমকালো উদ্বোধনী অনুষ্ঠান সবার জন্য উন্মুক্ত করেছে বাংলাদেশ অলিম্পিক এসোসিয়েশন (বিওএ)। এবারের গেমসে ঢাকার ২৬টি ভেন্যুতে ৩০টি ডিসিপ্লিনের খেলা অনুষ্ঠিত হবে। ঢাকার বাইরে শুধুমাত্র বগুড়ায় শহীদ চান্দু স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হবে ক্রিকেট। আজ আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হলেও কয়েকটি খেলায় মাঠের লড়াই শুরু হয়ে গেছে এরই মধ্যে। গতকাল দু’টি পদকেরও নিষ্পত্তি হয়েছে। টেনিসের পুরুষ এককে অমল রায় এবং দ্বৈতে অমল রায় ও পৃথুল মণ্ডল সোনা জেতেন।
ফিরে দেখা সাত আসর
১৯৭৮ সালের ১৫ই মার্চ ঢাকা স্টেডিয়ামে গেমসের যাত্রা শুরু হয়। তখন গেমসের নাম ছিল ‘বাংলাদেশ অলিম্পিক চ্যাম্পিয়নশিপ’। ওই আসরে সাঁতারু মোশাররফ হোসেন খান সর্বাধিক ১০টি স্বর্ণ জেতেন।
১৯৮০ সালে গেমসের দ্বিতীয় আসর বসে। ১১টি ডিসিপ্লিনে ১৪২৭ জন ক্রীড়াবিদ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। বিজেএমসির অ্যাথলেট সুফিয়া খাতুন ৪টি স্বর্ণ জিতে গেমসের সেরা ক্রীড়াবিদ হন। তৃতীয় আসরে গেমসের নাম পরিবর্তন করা হয়। অলিম্পিক চ্যাম্পিয়নশিপের পরিবর্তে বাংলাদেশ গেমস নাম দেয়া হয়। সে সঙ্গে দু’বছরের পরিবর্তে ৪ বছর অন্তর গেমস আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
১৯৮৪ সালে বসে গেমসের তৃতীয় আসর। এরশাদের সামরিক শাসনের মধ্যে সেবার ঢাকা স্টেডিয়ামের পরিবর্তে আর্মি স্টেডিয়ামে গেমসের উদ্বোধন হয়। বিটিএমসি ৪৭টি স্বর্ণপদক জিতে পদক তালিকার শীষস্থান দখল করে। সেনাবাহিনী ২৮টি স্বর্ণ জিতে দ্বিতীয় এবং বিজেএমসি ২৫টি স্বর্ণ জিতে তৃতীয় স্থান পায়।
১৯৮৮ সালে গেমসের চতুর্থ আসর বসে। ২০টি দলের প্রায় ৩০ হাজার ক্রীড়াবিদ ৮ দিনব্যাপী ২০টি ডিসিপ্লিনে অংশ নেন। বিজেএমসির নাজমা হায়দার রাফেজা অ্যাথলেটিকসে ৪টি স্বর্ণ জিতে সেরা ক্রীড়াবিদের সম্মান পান।
১৯৯২ সালে পঞ্চম বাংলাদেশ গেমসের আসর বসে ঢাকা জাতীয় স্টেডিয়ামে। ১৮ই ডিসেম্বর গেমসের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়। ৮ দিনব্যাপী প্রতিযোগিতায় সাঁতারু মনিরা রহমান ডালিয়া ৬টি স্বর্ণ জিতে গেমসের সেরা ক্রীড়াবিদের আসন অলঙ্কৃত করেন। ২২ ডিসিপ্লিনে ৩৬৭৯ জন ক্রীড়াবিদ ১৯৯৬ সালে ষষ্ঠ বাংলাদেশ গেমসে অংশ নেন। আনসারের সাঁতারু রেহানা জামান ব্যক্তিগতভাবে ১০টি স্বর্ণ জিতে সেরা ক্রীড়াবিদ হন।
২০০২ সালে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে সর্বশেষ বাংলাদেশ গেমসের আসর বসেছিল। ৮ দিনব্যাপী সপ্তম বাংলাদেশ গেমসে ২৫টি ডিসিপ্লিনে প্রায় তিন হাজার অ্যাথলেট অংশ নেন। ঢাকার ১২টি ভেন্যুতে গেমসের বিভিন্ন ডিসিপ্লিনে অনুষ্ঠিত হয়। নৌবাহিনীর সাঁতারু রুবেল রানা ৬টি জাতীয় রেকর্ডসহ সর্বাধিক ৮টি স্বর্ণ জেতেন। নৌবাহিনী ১৯টি স্বর্ণ পেয়ে পদক তালিকায় শীর্ষস্থান দখল করে।
এর পরেই বন্ধ হয়ে যায় বাংলাদেশ গেমস। ৪ বছর পর পর হওয়ার কথা থাকলেও দীর্ঘ ১১ বছর গেমসটি আলোর মুখ দেখেনি। গত জানুয়ারি দায়িত্ব নিয়ে বাংলাদেশ গেমস করার ঘোষণা দিয়েছিলেন সৈয়দ শাহেদ রেজা। এ কারণে দায়িত্বেও তিন মাসের মাথায় তড়িঘড়ি করেই এ আয়োজন। এ গেমসে মান বা শোভার যেন দরকার নেই বাংলাদেশ অলিম্পিক এসোসিয়েশনের। তাদের কাছে আয়োজনটাই মুখ্য।

Related Posts

About The Author

Add Comment